দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগোষ্ঠী Walton Group-এর বিরুদ্ধে ১৪টি ছায়া প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকার কর ফাঁকি, অর্থপাচার ও রাষ্ট্রীয় সুবিধার অপব্যবহারের গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এই অভিযোগপত্রটি সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জমা পড়েছে, যা দেশের সাধারণ জনগণের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। ইতোমধ্যে দুদক কমিশন অভিযোগটির বিষয়ে তড়িৎ অনুসন্ধান ও তদন্তের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং অভিযোগটির জন্য অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগের অপেক্ষায় আছে বলে নিশ্চিত করেছে দুদকের নির্ভরযোগ্য সূত্র।
অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই WALTON GROUP- ফ্যাসিস্ট সরকারের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের ছত্রছায়ায় এই সকল অপকর্ম ও দুর্নীতি করেছে । সেই প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গদের মধ্যে পলাতক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক বেসরকারি বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ও সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক-এর নাম নিশ্চিত করেছে দুদক সূত্র।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, Walton Group-এর একাধিক মালিক ও তাদের ঘনিষ্ঠ সহযোগীরা মিথ্যা আর্থিক বিবরণী, ভূয়া শেয়ার মূল্যায়ন, এনবিআর কর্মকর্তা ও অর্থ বিভাগের দুর্নীতিপরায়ণ কর্মকর্তাদের যোগসাজশে মনগড়া এসআরও এবং ভুয়া প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে সরকারের ভ্যাট ও ট্যাক্স রেয়াতসহ প্রায় ২,০০০-৩,০০০ কোটি টাকার সুবিধা নিয়েছেন। একইসাথে, শত কোটি টাকা বিদেশে পাচারের স্পষ্ট প্রমাণপত্র অভিযোগপত্রে সংযুক্ত রয়েছে।
Walton Group-এর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে তা হলো:
• ১৪টি ছায়া প্রতিষ্ঠান (shadow institutions) পরিচালনা করে অবৈধভাবে সম্পদ গোপন ও অর্থ পাচার করছে।
• সরকার কর্তৃক প্রদত্ত প্রণোদনা ও ট্যাক্স ছাড়ের অপব্যবহার করছে।
• ভূয়া বা অতিরিক্ত মূল্যের ভিত্তিতে ব্যয় দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করছে।
• জমি, সম্পত্তি ও কোম্পানির শেয়ারের ভুয়া মূল্যায়নের মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রতারিত করছে।
• মালিকগণ ও তাদের আত্মীয়রা বিদেশে অবৈধভাবে অর্থ প্রেরণ ও বিনিয়োগ করছে।
প্রধান অভিযুক্ত ব্যক্তিরা (Walton Group-এর মালিকগণ):
1. এস. এম. শামসুল আলম
2. এস. এম. মাহবুবুল আলম
3. এস. এম. আশরাফুল আলম
4. এস. এম. নুরুল আলম রেজভী
5. এস. এম. রেজাউল আলম
6. এস. এম. মঞ্জুরুল আলম ওভি
অভিযোগভিত্তিক প্রতিষ্ঠানসমূহ:
• Walton Hi-Tech Industries PLC
• Walton Digi-Tech Industries
• Walton Plaza
• এবং আরও কিছু সহযোগী প্রতিষ্ঠান
অভিযোগে অর্থনৈতিক অপকর্মের বিবরণ:
• প্রায় ৪০০–৫০০ কোটি টাকা ট্যাক্স ও ভ্যাট ফাঁকি
• ভুয়া শেয়ার মূল্যে কোম্পানি থেকে টাকা উত্তোলন।
• প্রতিবছর বিদেশে বিপুল পরিমাণ টাকা পাচার।
• সরকারকে ভুল তথ্য দিয়ে ২০০০–৩০০০ কোটি টাকার ট্যাক্স সুবিধা গ্রহণ।
অভিযোগের মূলবিন্দু:
• ১৪টি অদৃশ্য ছায়া প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সম্পদ লুকানো
• বছরে ৬০ কোটি টাকার ওপরে ব্যক্তিগত উত্তোলন
• শেয়ার বাজারে প্রতারণা করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ঠকানো
• সরকারি প্রণোদনা গ্রহণের নামে প্রকল্প ব্যয়ের ভুয়া মূল্যায়ন
• আন্তর্জাতিক মানি লন্ডারিং চক্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার আশঙ্কা
অভিযোগ পত্রটির ব্যাপারে দুদক কমিশন অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নেয়ার পর দেশের বিভিন্ন পর্যায়ে সচেতন নাগরিক, পেশাজীবী ও বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দুদকের প্রতি নতুন করে আশা ও আস্থার বার্তা প্রতিফলিত হয়েছে। তাঁরা মনে করছেন, Walton Group-এর মতো একটি প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করলে দেশব্যাপী দুর্নীতিবিরোধী লড়াইতে দৃঢ় বার্তা যাবে।
এ ধরনের অভিযোগ যে সময় উঠে এসেছে, তখন বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রশাসনের ভার গ্রহণ করেছে। জনমতের চাপ বাড়ছে, যাতে সরকার নিষ্প্রভ না থেকে Walton Group-এর আর্থিক লেনদেনের পূর্ণাঙ্গ নিরীক্ষা ও তদন্তের নির্দেশ দেয়। অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার মুহূর্ত যে এসকল দানব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুদক কিরূপ ব্যবস্থা নেয়। জনগণ প্রত্যাশা করছে, এই সরকার রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের ঊর্ধ্বে উঠে স্বচ্ছতার সাথে Walton মালিকদের বিদেশ গমন ও সম্পদ স্থানান্তর নিয়ন্ত্রণে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে। গণমাধ্যমে সক্রিয় অনেকেই বলছেন, সময় এসেছে “শিল্পপতি পরিচয়ে দুর্নীতিবাজদের মুখোশ উন্মোচনের”।
Walton Group-এর বিরুদ্ধে এই বিস্ফোরক অভিযোগের নিরপেক্ষ ও দ্রুত তদন্ত কেবল একটি প্রতিষ্ঠানের জবাবদিহিতাই নিশ্চিত করবে না, বরং দেশের আইন, প্রশাসন ও দুর্নীতিবিরোধী প্রচেষ্টার প্রতি জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধারে এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হয়ে থাকবে।