1. msuzon.du@gmail.com : নিউজ ডেস্ক : নিউজ ডেস্ক
  2. rajib.du1415@gmail.com : Rajib Ahmed : Rajib Ahmed
  3. support@renexlimited.com : অনলাইন : Renex অনলাইন
র‍্যাবের ছায়ায় অপরাধ সাম্রাজ্য: ক্ষমতার অপব্যবহার, গুম-খুন ও সীমাহীন দুর্নীতি — অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের চৌকস টিম - Dainik Deshbani
শুক্রবার, ১৩ জুন ২০২৫, ০৬:১৬ অপরাহ্ন

র‍্যাবের ছায়ায় অপরাধ সাম্রাজ্য: ক্ষমতার অপব্যবহার, গুম-খুন ও সীমাহীন দুর্নীতি — অভিযোগ অনুসন্ধানে দুদকের চৌকস টিম

নিজস্ব সংবাদদাতা
  • রবিবার, ১৮ মে, ২০২৫

ফ্যাসিস্ট আমলে র‍্যাপিড এ‍্যাকশন ব্যাটালিয়নে (র‍্যাব) কর্মরত সাবেক কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ভয়াবহ অভিযোগ উঠেছে এক সচেতন নাগরিকের আবেদনের প্রেক্ষিতে।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইতিমধ্যে সাবেক মহাপরিচালক খুরশিদ হোসেন, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল মাহাবুব আলম, কমান্ডার খন্দকার আল মঈন (সাবেক পরিচালক-মিডিয়া উইং), লে. কর্নেল আবু নাঈম মোঃ তালাত (সাবেক পরিচালক-প্রশাসন ও অর্থ উইং), অ‍্যাডিশনাল ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন (সাবেক সিও,র‍্যাব-১০ ), মেজর মনজুর মেহেদী (সাবেক কোম্পানি কমান্ডার ,র‍্যাব-১০ ), এ্যাডিশনাল এসপি সাইফুর (সাবেক কোম্পানি কমান্ডার ,র‍্যাব-১০ ), এএসপি কাউসার চৌধুরী (সাবেক স্কোয়াড কমান্ডার ,র‍্যাব-১০ )- এর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অনুসন্ধান শুরু করেছে।

👁️🗨️ অভিযোগের ফিরিস্তি :

গুম, খুন, চাঁদাবাজি, অর্থপাচার, অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়া ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে ব্যক্তিগত সাম্রাজ্য গড়ে তোলা—এই অভিযোগগুলো যেন কল্পনারও অতীত।

• সাবেক ডিজি খুরশিদ হোসেন—দায়িত্বে থাকা অবস্থায় অসংখ্য জঙ্গি/চরমপন্থি দমনের নাটকে সরাসরি হত্যাকাণ্ডের নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগ রয়েছে। তাঁর নামে রয়েছে কোটি টাকার মাদক সিন্ডিকেটের মাসোহারা আদায়ের তথ্য।
• কর্নেল মাহাবুব আলম—ডিজিএফআই এবং র‍্যাবের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থেকে গুম-খুনের কুশীলব ছিলেন। তিনি ও তাঁর শালা মিলে গড়ে তুলেছেন কোটি টাকার সম্পদ, যার অনেকটাই বিদেশে পাচার হয়েছে।
• কমান্ডার আল মঈন—র‍্যাবের মিডিয়া ব্যবস্থাপনায় থেকে রাষ্ট্রীয় অপরাধের ন্যারেটিভ পরিবর্তন করেছেন। বিভিন্ন অপারেশনের “সাজানো নাটক” চালিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছেন বলে অভিযোগ।
• সিও ফরিদ উদ্দিন — র‍্যাব-১০ এর অধিনায়ক মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিন, যিনি “সিও ফরিদ” নামে পরিচিত, কেবল একটি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা ছিলেন না—তিনি এক ভয়ংকর অপরাধ-চক্রের মস্তিষ্ক। তাঁর নেতৃত্বে র‍্যাব-১০ কার্যত একটি চাঁদাবাজি, গুম, খুন, অবৈধ অর্থআয়ের অপকেন্দ্রে পরিণত হয়েছিল। দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক এলাকা, যেমন যাত্রাবাড়ী,কেরানীগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, শ্রীনগর, এমনকি মাওয়া ফেরিঘাট—এসব স্থানে চাঁদা আদায়, জমি দখল, এবং জোরপূর্বক অর্থ আদায়ের মাধ্যমে জনগণকে ভয় দেখিয়ে এক প্রকার সন্ত্রাস কায়েম করেন তিনি।

তার কর্মকাণ্ড ছিল শুধু সীমিতপরিসরে নয়—তিনি ছিলেন একটি সুসংগঠিত অবৈধ অর্থ ও সম্পদ উপার্জনের সিন্ডিকেটের নেতা। সরকারি বাহিনীর রসদ বাজেট থেকে শুরু করে প্রজেক্ট বরাদ্দ—সবখানে তার হস্তক্ষেপ ছিল দুর্নীতির ছোঁয়ায় কলুষিত। যাত্রাবাড়ীতে ছাত্রদের উপর গুলি চালানোর হুমকি এবং বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সরাসরি দমন-পীড়নের নির্দেশ ছিল তাঁর দম্ভের চূড়ান্ত প্রকাশ।

তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে বিশাল সম্পদের পাহাড় গড়ে তোলার অভিযোগ—যা স্ত্রী ও স্বজনদের নামে ঢাকার অভিজাত এলাকায় যেমন গুলশান ও উত্তরা, তেমনি বিদেশেও প্রচুর পরিমাণে টাকার হদিস পাওয়া যাচ্ছে। এইসব সম্পদ অর্জিত হয়েছে সরাসরি জনভিত্তিক ভয়ভীতি, মিথ্যা মামলা, এবং জোরপূর্বক চাঁদা আদায়ের মাধ্যমে।

• লে. কর্নেল আবু নাঈম মোঃ তালাত (সাবেক
পরিচালক – প্রশাসন ও অর্থ উইং)— প্রশাসন ও আর্থিক ব্যবস্থাপনায় থাকায় তাঁর বিরুদ্ধে রয়েছে “ভুয়া বিল-ভাউচার”, প্রভাব খাটিয়ে কন্ট্রাক্ট চুক্তি, লজিস্টিক ও ক্রয় জালিয়াতির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ। অভিযোগ রয়েছে—তিনি ঘনিষ্ঠ বেসরকারি ঠিকাদারদের মাধ্যমে কমিশন ভিত্তিক চুক্তিতে চুক্তি আদায় করতেন এবং উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় এসব দুর্নীতি চালিয়ে যান।

• মেজর মনজুর মেহেদী (সাবেক কোম্পানি কমান্ডার, র‍্যাব-১০)—— র‍্যাব-১০ এর অপারেশনাল কমান্ডার থাকা অবস্থায় তিনি সরাসরি অস্ত্র ব্যবহার করে গুম ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের একাধিক অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন। এলাকার চিহ্নিত ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসোহারা আদায়, অবৈধ বাণিজ্যে সহযোগিতা এবং আইনবহির্ভূত অপারেশন পরিচালনার বিষয়ে তাঁকে ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে উল্লেখ করেছে অভিযোগে।

• এ্যাডিশনাল এসপি সাইফুর রহমান (সাবেক কোম্পানি কমান্ডার, র‍্যাব-১০)—— ২৯ বিসিএস এর এই পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে রয়েছে দলবদ্ধভাবে চাঁদাবাজি, মাদকদ্রব্য উদ্ধার নাটক সাজিয়ে অর্থ আদায়, এবং নির্দোষ ব্যক্তিকে হয়রানি করার অভিযোগ। এছাড়া ও তিনি বিশেষ কিছু সিন্ডিকেটের হয়ে ‘মিডলম্যান’ হিসেবে কাজ করতেন এবং র‍্যাবের পোশাক ও ক্ষমতা ব্যবহার করে ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক টাকা আদায় করতেন।

• এএসপি কাউসার চৌধুরী (সাবেক স্কোয়াড কমান্ডার ,র‍্যাব-১০ )——র‍্যাব-১০ এর সাবেক স্কোয়াড কমান্ডার এএসপি এ.কে.এম কাউসার চৌধুরী ছিলেন সিও ফরিদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সহযোগী ও ক্যাশিয়ার। তার কার্যকলাপের ধরন দেখে সহজেই অনুমেয়—তিনি ছিলেন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ছত্রছায়ায় গড়ে ওঠা একজন পেশাদার অপরাধী, যিনি আইন রক্ষার দায়িত্ব পেয়ে তা নিজের অপরাধ আড়াল ও লাভের জন্য ব্যবহার করেছেন।

দাউদকান্দি থানার ওসি থাকাকালীন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে চাঁদাবাজির মহোৎসবে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন কাউসার। র‍্যাব-১০-এ যোগ দিয়ে মুন্সিগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, শ্রীনগরসহ আশেপাশের এলাকায় ব্যবসায়ী, পরিবহন মালিক, জমির মালিক ও সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করতেন। এই চাঁদা আদায় ছিল সুসংগঠিত মাসোহারার অংশ, যার শীর্ষে ছিলেন সিও ফরিদ।

মাওয়া ফেরিঘাট এলাকায় তাঁর ছিল একক আধিপত্য, যেখানে লঞ্চ মালিক থেকে শুরু করে ফেরি স্টাফ—সবাইকে চাঁদা দিতে হতো নতুবা ভয়ংকর হয়রানির শিকার হতে হতো। কেউ চাঁদা না দিলে তাঁর বিরুদ্ধে সাজানো মামলা, গ্রেফতার ও নির্যাতনের হুমকি ছিল তার রুটিন কাজ।

এএসপি কাউসারের আরও একটি দিক হচ্ছে তার জুয়া ও মাদকাসক্ত জীবনধারা। কাকরাইলের হোটেল রাজমণি ইশাখাঁ ছিল তার প্রতিদিনের জুয়ার আসরের কেন্দ্রস্থল। তিনি সরকারি বাসভবন ও ক্যাম্পে প্রতি রাতে মদের আসর বসাতেন, র‍্যাব-১০ এর সদস্যরাও এ সত‍্যতা নিশ্চিত করেছে ।

তাঁর নামে-বেনামে ঢাকার গুলশান, বনানী, উত্তরা এলাকায় বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ও প্লট রয়েছে, যেগুলো অবৈধ উপায়ে অর্জিত অর্থে কেনা। তদুপরি, বিদেশে অর্থপাচার ও দ্বৈত নাগরিকত্বধারী আত্মীয়-স্বজনের মাধ্যমে সম্পদ গচ্ছিত রাখা সংক্রান্ত সুনির্দিষ্ট অভিযোগও রয়েছে।

দুদক সূত্রে জানা যায়, এদের অনেকেই স্ত্রীর নামে সম্পত্তি রেজিস্ট্রি করেছেন, কেউ কেউ বিদেশি নাগরিকত্ব অর্জনের চেষ্টায় রয়েছেন। তাদের বিদেশে ভ্রমণ ও সম্পদ স্থানান্তরের চেষ্টা রোধে শিগগিরই রেড অ্যালার্ট জারি হতে পারে।

একাধিক গোপন দলিল‍ ও অবৈধ লেনদেন সংক্রান্ত তথ্য ইতিমধ্যে দুদকের হাতে এসেছে বলে জানা গেছে।

সচেতন নাগরিক সমাজ মনে করে, এই সিন্ডিকেট ধ্বংস করতে হলে দ্রুত বিচার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির বিকল্প নেই। দেশের সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলেছে—ফ‍্যাসিস্ট আমলের সুবিধাভোগী ও অত‍্যাচারী এই কর্মকর্তারা যদি এখনো আইনের ঊর্ধ্বে থাকে, তাহলে আইনের শাসন কোথায়? অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে দেশের মানুষের আস্থা অসীম।

এই অভিযোগগুলো শুধু কয়েকজন কর্মকর্তার ব্যক্তিগত দুর্নীতির চিত্র নয়—এটি পুরো একটি সিস্টেমের রোগের প্রতিফলন।একসময় যে বাহিনী গর্বের প্রতীক হয়ে উঠেছিল, সেই র‍্যাবেক নির্দিষ্ট কিছু সদস্য ক্ষমতার অপব্যবহার করে দেশের মানুষের আস্থা ধ্বংসের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। এখন সময় এসেছে—অভিযোগের মুখোমুখি সকলকে বিচারের আওতায় এনে প্রশাসনিক শুদ্ধি অভিযান চালানোর। যদি এসব অপরাধীচক্রকে জবাবদিহির আওতায় না আনা হয়, তাহলে ন্যায়বিচারের ধারণাই শুধু হুমকির মুখে পড়বে না, বরং ভবিষ্যতে আরও ভয়ংকর অপব্যবহারের পথ উন্মুক্ত হবে।

শেয়ার:
আরও পড়ুন...
স্বত্ব © ২০২৫ দৈনিক দেশবানী
ডিজাইন ও উন্নয়নে - রেনেক্স ল্যাব