1. [email protected] : নিউজ ডেস্ক : নিউজ ডেস্ক
  2. [email protected] : Rajib Ahmed : Rajib Ahmed
  3. [email protected] : অনলাইন : Renex অনলাইন
যে নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী অনেকের অচেনা - Dainik Deshbani
বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫, ০৬:৫০ অপরাহ্ন

যে নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী অনেকের অচেনা

নিজস্ব সংবাদদাতা
  • বুধবার, ১৯ মে, ২০২১

পঞ্চাশের কাছাকাছি, ৪৬ বছর বয়স তাঁর। কিন্তু অভিনয়টা যেন সতেরোয়। সবুজ, তারুণ্যে ভরপুর। নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকীকে মনে করলে চোখে প্রথমেই ভাসে ওয়াসিপুরের এক গুন্ডার চেহারা, যে দুই হাতে দোনলা বন্দুক দিয়ে হেসেখেলে মানুষ খুন করে। সেই গুন্ডাই আবার প্রেমিকার ঘরে যায়, অভিসারে মাতে। ২০১২ সালের ‘গ্যাংস অব ওয়াসিপুর’ ছবির ফয়জাল খান তিনি। এই ছবি নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকীকে চিনিয়ে দিয়েছিল সাফল্যের সিঁড়ি।

কিন্তু আমির খান, সঞ্জয় দত্তের সঙ্গে অভিনয় করেছিলেন যে নওয়াজ, তাঁকে চিনি কজন? কিংবা গণেশ গাইতোন্ডের আড়ালে হারিয়ে গেছেন যে মাধুরী দীক্ষিত অভিনীত ছবির এক্সট্রা আর্টিস্ট, তাঁকে কি জানি? ছ্যাঁচড়া গুন্ডা, রেস্তোরাঁর ওয়েটার, পকেটমার, এক্সট্রা আর্টিস্ট, নায়কের ভাই, গ্রামের সাংবাদিক—নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকীর একজন ‘ফয়জাল খান’ হয়ে ওঠার যে ভিত্তি, জন্মদিনে সেদিকে চোখ ফেরানো যাক একনজর।

নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী। ইনস্টাগ্রাম।

বুধানা থেকে বলিউডে এসেছিলেন নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী। উত্তর প্রদেশের মুজাফফর নগরের ছোট্ট একটি শহর বুধানা। পড়ালেখা করেছেন রসায়নে। কিছুদিন রসায়নবিদ হিসেবে কাজও করেছেন। কিন্তু দিল্লিতে কাজের খোঁজে এসে প্রেমে পড়েন মঞ্চনাটকের। সেই প্রেম তাঁকে টেনে নিয়ে যায় ভারতের প্রখ্যাত নাটকের প্রতিষ্ঠান ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামায় (এনএসডি)। সেখানে অভিনয়ের তালিম নিয়ে বলিউডে পাড়ি জমান। কিন্তু একদিন যিনি গনেশ গাইতোন্ডে হয়ে ওটিটিতে বাজিমাত করবেন, তাঁকে খুব সহজেই মেনে নেয়নি বলিউড।

অগত্যা ছোট ছোট চরিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র দিয়ে নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকীর রুপালি পর্দায় অভিনয়ের যাত্রা শুরু হলো। ১৯৯৯ সালে ‘সারফারোশ’ ছবি করে তাক লাগিয়ে দেন মি. পারফেকশনিস্ট আমির খান। সেই ছবিতে একটা ছোট্ট চরিত্র, এলাকার ছোট এক গুন্ডার চরিত্রে দেখা যায় নওয়াজু্দ্দিন সিদ্দিকীকে। সেই নওয়াজকে কি চেনা যায়? হয়তো না। এমনকি আমির খান নিজেও পরে চিনতে পারেননি তাঁকে। এক সাক্ষাৎকারে নওয়াজু্দ্দিন সিদ্দিকী স্মৃতিচারণ করে বলেছিলেন, ‘ “সারফারোশ” ছবিতে অভিনয় করার সময় আমির খানের সঙ্গে আমার কোনো কথা হয়নি। “সারফারোশ”-এর পর এবং “তালাশ” ছবির আগে “পিপলি লাইভ” ছবির সেটে দেখা হয়েছিল আমির খানের সঙ্গে। আমরা যখন শুটিং করছি, তখন তিনি আমাদের সেটে আসেন। আমি ভাবছি, তাঁকে বলব যে আমরা “সারফারোশ” ছবিতে একসঙ্গে অভিনয় করেছি। আমির খান ব্যাপারটি জানার পর খুবই খুশি হয়েছিলেন। তিনি তখন শুটিং থামিয়ে দেন এবং ওই ছবিতে আমাদের একসঙ্গে অভিনয়ের কথা সবাইকে বলেন।’

নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী। ইনস্টাগ্রাম।

বলে রাখা ভালো, ‘সারফারোশ’ ছবিতে অভিনয়ের পর আমিরের সঙ্গে ফের নওয়াজ অভিনয় করেন ‘তালাশ’ ছবিতে, ২০১২ সালে। তত দিনে নওয়াজ ‘নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী’ হয়ে উঠছেন। তাঁকে চিনতে শুরু করেছেন সবাই। ‘পিপলি লাইভ’ ছবিতে এক সাংবাদিকের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন নওয়াজ। ছবিটি প্রযোজনা করেন আমির খান।

‘সারফারোশ’-এর পর বড় চরিত্র পেতে তাঁকে আরও দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়। ‘শূল’ ছবিতে মনোজ বাজপেয়ী আর রাভিনা ট্যান্ডন কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন। সেখানে ছোট্ট একটি চরিত্র পান নওয়াজ। রেস্তোরাঁর ওয়েটার। সুনীল শেঠি ও উর্মিলা মাতন্ডকরকে নিয়ে রামগোপাল ভার্মা বানিয়েছিলেন হিট ছবি ‘জংলি’। সে ছবিতেও ভার্মা নওয়াজের জন্য বরাদ্দ করেছিলেন ছোট্ট একটি চরিত্র, বার্তাবাহক। এর মধ্যেই নওয়াজ প্রস্তাব পান বলিউডের নামকরা এক অভিনেতার সঙ্গে সহশিল্পী হিসেবে অভিনয়ের। একসময় তাঁরা বলিউডে উপহার দেন ‘লাঞ্চবক্স’, ‘পান সিং তুমার’–এর মতো ছবি। ইরফান খানের সঙ্গে নওয়াজ অভিনয় করলেন স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘দ্য বাইপাস’-এ। পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নয়, প্রথমবারের মতো নওয়াজের প্রশংসা জোটে স্বল্পদৈর্ঘ্য এই চলচ্চিত্র থেকে। বিএফআই লন্ডন ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল ও মিলান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রদর্শিত হয় ছবিটি।

‘সারফারোশ’ সিনেমাতে নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকীসংগৃহীত

একই বছর নওয়াজ পান আরেকটি ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ। এই ছবির নায়ক সঞ্জয় দত্ত। ‘মুন্না ভাই এমবিবিএস’ ছবির নাম। পাগলাটে এক মেডিকেল শিক্ষার্থীকে কেন্দ্র করে এই ছবিতে নওয়াজ পেলেন পকেটমারের চরিত্র। করে ফেলেন অনায়াসে। কিন্তু সঞ্জয়ের সঙ্গে তখনো কথা হয়নি তাঁর। এক সাক্ষাৎকারে তা জানিয়েছিলেন নওয়াজ। তিনি বলেন, ‘মুন্না ভাই ছবিতে অভিনয়ের সময় আমার কখনোই সঞ্জয় দত্তের সঙ্গে দেখা হয়নি। আমি ছিলাম ভিড়ের মধ্যে। তাঁর সঙ্গে কোনো কথা হয়নি আমার। তবে হ্যাঁ, আমরা পরে অনেকবার দেখা করেছি। সঞ্জু, অসাধারণ মানুষ।’

এভাবে দিনের পর দিন ছোট ছোট চরিত্র করেছেন নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী। আর অপেক্ষায় ছিলেন, কখন আসে সেই সুযোগ। অভিনয়ে নিজেকে ঢেলে দেবেন উজাড় করে। একে একে মাধুরী দীক্ষিতের ‘আজা নাচলে’, ‘এক চালিস কি লাস্ট লোকাল’, ‘ব্ল্যাক ফ্রাইডে’, ‘ফিরাক’, কিংবা ‘পিপলি লাইভ’—ছবিগুলোয় নওয়াজ থেকে যান অচেনা রূপেই।

২০১১ সাল। মোক্ষম এক সুযোগ পেলেন নওয়াজ। প্রথমবারের মতো দেখিয়ে দেওয়ার মতো কোনো চরিত্র পেলেন তিনি। প্রথম সুযোগ কাজে লাগিয়েই একেবারে বাজিমাত! ‘দেখ ইন্ডিয়ান সার্কাস’ ছবিতে ভালো একটি চরিত্রে অভিনয় করেন নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী। ভারতের প্যারালাল ঘরানার এই সিনেমা প্রদর্শিত হয় বুসান চলচ্চিত্র উৎসবে। জিতে নেয় অডিয়েন্স চয়েস অ্যাওয়ার্ডস। শুধু তাই নয়, ভারতের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে বিশেষ জুরি অ্যাওয়ার্ড জেতেন নওয়াজুদ্দিন সিদ্দিকী। এই যে যাত্রা শুরু হলো, পরবর্তীকালে সে যাত্রা চলতেই থাকল।

 

শেয়ার:
আরও পড়ুন...
স্বত্ব © ২০২৫ দৈনিক দেশবানী
ডিজাইন ও উন্নয়নে - রেনেক্স ল্যাব