মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের (ডিএনসি) সদ্য বদলি হওয়া সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান এখন আলোচনা ও সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। মাদকবিরোধী রাষ্ট্রীয় অভিযানে যিনি থাকতেন নেতৃত্বে, তিনিই এখন বদলি বাণিজ্য, রাজনৈতিক অনুগত্য এবং প্রশাসনিক ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে জর্জরিত। ৫ আগস্টের আগে ঢাকায় পোস্টিং এ থেকে এখনো কিভাবে ঢাকা বিমানবন্দর ও গুলশান এলাকার মত গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটে তাকে পদায়ন করা হলো তা জন্ম দিয়েছে চাঞ্চল্যের।
মেহেদী হাসানের ক্যারিয়ার বা দক্ষতা নয়, বরং তার উত্থানের মূল চালিকাশক্তি রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা। তিনি পরিচিত বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে, যার নেতৃত্বে ছিলেন ডিএনসির প্রভাবশালী সাবেক ডিজি খন্দকার মোহাম্মদ ফিজুর রহমান। একই সঙ্গে রয়েছে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের ছত্রছায়া, যিনি এই সিন্ডিকেটের অন্যতম আড়াল বলে অভিযোগ রয়েছে। ফ্যাসিস্ট সরকারের পলাতক সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর কেন্দ্রিক সকল বাণিজ্যের ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত ছিল এই মেহেদী হাসান।
মেহেদী হাসানকে প্রশাসনের অভ্যন্তরেই অনেকে চিহ্নিত করেন একজন “বদলি ব্যবসায়ী” হিসেবে। বরিশাল অঞ্চলের সাথে তার সংযোগ এবং আওয়ামী লীগপন্থী প্রভাবশালী গোষ্ঠীর মাধ্যমে তিনি বারবার ঢাকায় সুবিধাজনক পোস্টিং পেয়ে আসছেন। ঢাকায় অবস্থান যেন তার অধিকার, এমন ভাবেই বারবার তাকে ফিরিয়ে আনা হয়, যার পিছনে মোটা অঙ্কের লেনদেন ও রাজনৈতিক লবির শক্ত ভূমিকা রয়েছে বলে দাবি একাধিক সূত্রের। তবে ৫ আগস্টে ফ্যাসিস্ট পতনের পর এখনো কিভাবে ফ্যাসিস্টের দোসর এ কর্মকর্তা বীরদর্পে আছে তা অবশ্যই গবেষণার বিষয়।
মেহেদীর পিতা ছিলেন খুলনা অঞ্চলে ব্যবসায়ী এবং তিনি বরিশালের সাবেক মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহর ব্যবসায়িক অংশীদার। ওই আবুল খায়ের আবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আত্মীয় হিসেবে পরিচিত হলেও রাজনৈতিক বাস্তবতায় আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। মেহেদীর পরিবার কখনো সরাসরি রাজনীতিতে থাকেনি, কিন্তু প্রভাবশালী রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের ছায়ায় ব্যবসা ও প্রশাসনিক সুবিধা নিয়েই বেড়ে উঠেছে।
ডিএনসির প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা অবস্থায় মেহেদীর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ রয়েছে তা হলো —
• গুলশানে দায়িত্বে থাকা কালে হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও বার গুলো থেকে মাসোহারা নির্ধারণ
• সিন্ডিকেটভিত্তিক পদায়ন ও পরিকল্পনা
• রাসায়নিক প্রতিবেদন ব্যবস্থাপনায় হস্তক্ষেপ
এমন এক সময় যখন রাষ্ট্র ফ্যাসিস্টের দোসরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে, তখন একজন সহকারী পরিচালক যিনি ঘন ঘন বদলির মধ্য দিয়ে সুবিধাজনক অবস্থানে থাকেন, তার বিরুদ্ধে ওঠা এই অভিযোগগুলোকে হালকাভাবে দেখার সুযোগ নেই, এমন ই মনে করছেন সচেতন মহল।
মেহেদী হাসান কীভাবে একাধিকবার ঢাকায় ফিরলেন? কেন তার মতো একজন মাঝারি পদমর্যাদার কর্মকর্তা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার ছায়ায় এমন নিরাপদ? তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্তের মুখ দেখবে কি? না কি রাজনৈতিক আনুগত্যের ঢালে আড়াল হয়ে যাবেন তিনিও, দেখা যাক এ প্রতিবেদন প্রকাশের পর তার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগগুলো নিয়ে প্রশাসন কতটুকু তৎপর হয় বা তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করে।