1. msuzon.du@gmail.com : নিউজ ডেস্ক : নিউজ ডেস্ক
  2. maharaj.cu@gmail.com : Maharaj Hossain : Maharaj Hossain
  3. rajib.du1415@gmail.com : Rajib Ahmed : Rajib Ahmed
  4. support@renexlimited.com : অনলাইন : Renex অনলাইন
বাংলাদেশ-ভারতের বাণিজ্য টানাপোড়েন: পণ্য পরিবহনে খরচের হিসাব কষছেন ব্যবসায়ীরা - Dainik Deshbani
শুক্রবার, ২৩ মে ২০২৫, ১০:৩০ পূর্বাহ্ন

বাংলাদেশ-ভারতের বাণিজ্য টানাপোড়েন: পণ্য পরিবহনে খরচের হিসাব কষছেন ব্যবসায়ীরা

নিজস্ব সংবাদদাতা
  • শনিবার, ৩ মে, ২০২৫

তিক্ত সম্পর্কের জেরে প্রতিবেশী বাংলাদেশ ও ভারত সম্প্রতি পরস্পরের বিরুদ্ধে বাণিজ্যে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এর সম্ভাব্য প্রভাব মোকাবিলায় প্রস্তুতি নিচ্ছে দুই দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো। স্থানীয় শিল্পকে রক্ষার জন্য গত মাসে ভারত থেকে স্থলপথে সুতা আমদানি সীমিত করেছে বাংলাদেশ। ভারত দেশটির স্থলবন্দর ও বিমানবন্দর দিয়ে তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানির জন্য যে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা দিয়েছিল বাংলাদেশকে তা হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়ার কয়েক দিন পর ঢাকা এই পদক্ষেপ নেয়। দেশ দুটির মধ্যে যখন এ নিয়ে টানাপোড়েন চলছে, তখন উভয় দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো পণ্য পরিবহনে খরচের হিসাব কষতে শুরু করেছে। বিট্রিশ সংবাদ সংস্থা বিবিসির এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।

বাংলাদেশের পোশাক কারখানার জন্য সুতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সড়কপথে কড়াকড়ি থাকলেও সমুদ্র ও আকাশপথে সুতা বাংলাদেশে আনা যাবে এখনও। তবে এ দুটি রুট ধীরগতির ও ব্যয়বহুল। ২০২৪ সালে ভারত ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার মূল্যের সুতা বাংলাদেশে রপ্তানি করেছিল, যার এক-তৃতীয়াংশ আসে স্থলবন্দর দিয়ে। আগে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকরা তাদের উচ্চমানের তৈরি পোশাক সড়কপথে ভারতীয় শহরগুলোতে পাঠাতে পারতেন, যেখান থেকে তা ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হতো। বর্তমানে ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা বন্ধ থাকায় তা সম্ভব হচ্ছে না।

‘এটি বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি শিল্পের জন্য একটি ধাক্কা’ বলছেন সাপ্লাই চেইন ফার্ম এমজিএইচ গ্রুপের প্রধান আনিস আহমেদ। বিশ্বখ্যাত জারা’র মতো ব্র্যান্ডের জন্য পণ্য পরিবহন করা এ ব্যবসায়ী বলেন, ‘ভারতের রুট দিয়ে যে পণ্য এক সপ্তাহে পশ্চিমা দেশগুলোতে পরিবহন করা হতো, সমুদ্রপথে তা পরিবহনে আট সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগে।’ চীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক বাংলাদেশ গত বছর ৩৮ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। এর মধ্যে ১ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি ভারতের স্থল ও বিমান পথ দিয়ে পরিবহন হয়েছে। এটিকে বেশ সম্ভাবনাময় হিসেবে দেখছেন তিনি। বাংলাদেশে সীমিত বিমান পরিবহন সক্ষমতা এবং অল্প বিমানবন্দরের কারণে এখান থেকে সরাসরি পণ্য রপ্তানির সুযোগ কম।

অনেকেই দিল্লির ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধা প্রত্যাহারকে ড. ইউনূসের সাম্প্রতিক চীন সফরের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখছেন। তিনি বাংলাদেশকে ভারতের স্থলবেষ্টিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য ‘সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক’ বলে মন্তব্য করেন এবং এই অঞ্চলটি ‘চীনা অর্থনীতির সম্প্রসারণ’ হয়ে উঠতে পারে এমন পরামর্শ দেন। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর নেতারা এই মন্তব্যকে ‘আক্রমণাত্মক’ বলে অভিহিত করেন। ড. ইউনূসের এই মন্তব্য, চীনের কাছে অঞ্চলটির (উত্তর-পূর্বাঞ্চল) ভারতের কৌশলগত দুর্বলতার কথা তুলে ধরে যা দিল্লিতে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে।

ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে মূল ভূখণ্ডের সংযোগ রক্ষাকারী ২০ কিলোমিটার সংকীর্ণ ভূখণ্ড শিলিগুড়ি করিডোর যাকে ‘চিকেন নেক’ (মুরগির ঘাড়) বলা হয়। এটি নেপাল ও বাংলাদেশ দ্বারা বেষ্টিত এবং তিব্বতের চুম্বি উপত্যকার কাছাকাছি অঞ্চল দ্বারা সংযুক্ত। সীমান্ত উত্তেজনার ইতিহাস এবং ১৯৬২ সালে যুদ্ধে হেরে যাওয়ার পর ভারতীয় প্রতিরক্ষা পরিকল্পনাকারীরা আশঙ্কা করছেন যে, চীন ভবিষ্যতে যেকোনো সংঘাতে উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোকে দেশের বাকি অংশ থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্য করিডোরটিকে লক্ষ্যবস্তু করতে পারে।

 চীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক বাংলাদেশ

চীনের পর বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক বাংলাদেশ

বাংলাদেশি বিশ্লেষকরা বলছেন, ড. ইউনূসের মন্তব্যের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে। আঞ্চলিক সংযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে তিনি ওই মন্তব্য করেছিলেন। অন্যদিকে চীন সফরের সময় বাংলাদেশের উত্তরের তিস্তা নদী প্রকল্পে বেইজিংয়ের ১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের আগ্রহকে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ। ভারতীয় বিশ্লেষকরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে, কৌশলগত শিলিগুড়ি করিডোরের কাছে অবস্থিত এই প্রকল্পে চীনের সম্পৃক্ততা দিল্লিকে উদ্বিগ্ন করে তুলতে পারে।

বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, উভয়পক্ষের মধ্যে তিক্ত সম্পর্কের কারণে উদ্বেগ রয়েছে। গত বছরের ৫ আগস্ট বিক্ষোভের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকে দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। শেখ হাসিনা বর্তমানে ভারতে নির্বাসিত রয়েছেন। নোবেল বিজয়ী মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দেশ পরিচালনা করছে। মানবতাবিরোধী অপরাধ, অর্থপাচার ও দুর্নীতির অভিযোগের জন্য শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণের দাবি করে আসছে ঢাকা। দিল্লিও আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকার এই দাবির ব্যাপারে কোনো জবাব দেয়নি। এছাড়া বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর হামলার অভিযোগে ভারত প্রায়শই এর সমালোচনা করে আসছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন নেতার কথিত হত্যাকাণ্ডকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে ‘পদ্ধতিগত নিপীড়নের একটি ধরন’ বলে জানিয়েছে ভারত। তবে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশ সংখ্যালঘুদের ‘নির্যাতনের লক্ষ্যবস্তু’ করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে এবং এসব বেশিরভাগ ঘটনাকে রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বা সাধারণ অপরাধ বলে অভিহিত করেছে। ১৭ কোটি জনসংখ্যার মধ্যে বাংলাদেশে হিন্দু জনগোষ্ঠী ১০ শতাংশেরও কম।

ভারতের কঠোর ভিসানীতি নিয়ে বাংলাদেশে ক্ষোভ বাড়ছে। শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে ভারতের ভিসা অনুমোদন কমে গেছে। আগে, পর্যটন, ব্যবসা, শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য প্রতি বছর ২০ লাখের মতো বাংলাদেশি ভারতে যেতেন। স্থানীয় গণমাধ্যমের মতে, গত কয়েক মাসে প্রতিদিনের ভিসার সংখ্যা ৮০ শতাংশেরও বেশি কমে গেছে। শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান এবং তাকে বাংলাদেশে প্রত্যর্পণের দাবি এখনও একটি বড় বিরক্তিকর বিষয় ভারতের কাছে। এ বিষয়ে ভারতের সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শ্যাম শরণ বলেন, ‘তাদের বুঝতে হবে যে শেখ হাসিনাকে তাদের হাতে তুলে দেওয়ার কোনো উপায় নেই। আমরা জানি, যদি তাঁকে হস্তান্তর করা হয় তবে তাঁর কী হবে। আমার মনে হয় ভারতের জনমত এতে সাড়া দেবে না।’

ক্রমবর্ধমান এসব উত্তেজনার মধ্যে ভারতের পোশাক প্রস্তুতকারকদের সমিতি স্থলপথে বাংলাদেশি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধের আহ্বান জানায়। এর প্রেক্ষিতে ঢাকার সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সিনিয়র অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর জন্য ভারতকে শেখ হাসিনা সরকারের দেওয়া অন্যান্য ট্রানজিট এবং ট্রান্সশিপমেন্ট সুবিধাগুলোও পুনর্মূল্যায়ন করা উচিত।’ ভারত তার স্থলবেষ্টিত উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পণ্য পরিবহনের জন্য বাংলাদেশি বন্দর, সড়ক এবং জলপথ ব্যবহার করে, যার ফলে দূরত্ব, সময় ও খরচ কম হয়। তবে কর্মকর্তারা বলছেন যে, ট্রানজিটের পরিমাণ প্রত্যাশিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি।

এদিকে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান সম্পর্কের কারণে দিল্লি-ঢাকা সম্পর্কেও উত্তেজনা বাড়ছে। বাংলাদেশ একসময় পূর্ব পাকিস্তান ছিল। ১৯৭১ সালে ভারতের সমর্থনে স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিল। শেখ হাসিনা তাঁর ১৫ বছরের শাসনামলে পাকিস্তান থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছিলেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব আমনা বালুচ গত মাসে ঢাকা সফর করেন যা ১৫ বছরের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় কোনো কর্মকর্তার প্রথম সফর। গত সপ্তাহে ভারত-শাসিত কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার পর দিল্লি ও ইসলামাবাদের মধ্যে উত্তেজনার কারণে পাকিস্তানের উপ-প্রধানমন্ত্রী ইসহাক দারের বাংলাদেশ সফর স্থগিত করা হয়।

ভারতের সাবেক কূটনীতিক সরণ বলেন, আমার মনে হয় না পাকিস্তানের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ নিয়ে কোনো উদ্বেগ রয়েছে। যদি এমন কোনো ইঙ্গিত থাকে যে, ভারতের জন্য পরিস্থিতি কঠিন করার কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে, তবে তা অবশ্যই উদ্বেগের কারণ হবে।

উভয় পক্ষের তীব্র সরকারি প্রতিক্রিয়া ভারত ও বাংলাদেশে জনমতকেও প্রভাবিত করছে। ভারতীয় মিডিয়ায় সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ এবং ইসলামপন্থী হুমকিকে অতিরঞ্জিত করার অভিযোগ করা হচ্ছে। অন্যদিকে বাংলাদেশেও ভারতবিরোধী মনোভাব বাড়ছে। এর মধ্য দিয়ে বছরের পর বছর ধরে গড়ে ওঠা জনগণের সঙ্গে জনগণের সম্পর্ক ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে বলে মনে হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, উভয় পক্ষ যদি শান্ত থাকতে ব্যর্থ হয়, তাহলে তাদের পদক্ষেপ বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের ক্ষতির কারণ হতে পারে।

শেয়ার:
আরও পড়ুন...
স্বত্ব © ২০২৫ দৈনিক দেশবানী
ডিজাইন ও উন্নয়নে - রেনেক্স ল্যাব