হত্যাচেষ্টা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, চুরিসহ বিভিন্ন অভিযোগে মামলা থাকা দুই আসামিকে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলা ছাত্রলীগের নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ ঘটনার প্রতিবাদে বুধবার দুপুরে উথলী মোড় এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন উপজেলা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের একাংশ।
সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী রাজু আহমেদ বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে আগামী এক বছরের জন্য শিবালয় উপজেলা ছাত্রলীগের দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি অনুমোদন দেওয়া হয়।
নবগঠিত কমিটিতে সভাপতি পদে দায়িত্ব পাওয়া রাকিব হাসানাত আওয়ালের বিরুদ্ধে তিনটি এবং সাধারণ সম্পাদক মো. নাজমুল হুদা নয়নের বিরুদ্ধে শিবালয় থানায় পাঁচটি মামলা রয়েছে।
রাকিব উপজেলার ষাটঘর তেওতা গ্রামের আমজাদ মৃধার ছেলে। আর নয়ন নিহালপুর গ্রামের খলিল মল্লিকের ছেলে।
শিবালয় থানার ওসি মো. ফিরোজ কবির জানান, নবগঠিত কমিটির সভাপতি রাকিব হাসানাত আওয়ালের বিরুদ্ধে রয়েছে তিনটি মামলা। আর সাধারণ সম্পাদক মো. নাজমুল হুদা নয়নের বিরুদ্ধে রয়েছে পাঁচটি মামলা।
তিনি জানান, রাকিবের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা, হামলা, ভাঙচুরসহ বিভিন্ন অভিযোগে থানায় তিনটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ২০১১ সালের ২৪ জুন উপজেলার তেওতা বাসেট গ্রামের সুধান্ন মণ্ডলের ছেলে কানাই মণ্ডল বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।
২০১৭ সালের ৫ জুলাই নিহালপুর গ্রামের মৃত নোয়াই মল্লিকের ছেলে নজরুল ইসলাম আরেকটি মামলা করেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২২ আগস্ট দশচিড়া গ্রামের শামসুল হকের ছেলে সাইফুল ইসলাম একটি মামলা করেন।
তদন্ত শেষে মামলাগুলোর প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা হয়েছে বলেও জানান ওসি।
মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে রাকিব বলেন, রাজনৈতিক অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জেরে সবগুলো মামলা হয়েছিল।
তবে ছাত্রলীগের এ নেতার দাবি, তিনটি মামলার মধ্যে এখন একটি মামলা বিচারাধীন, বাকি দুটি থেকে তিনি খালাস পেয়েছেন।
অন্যদিকে নয়নের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা, বেআইনিভাবে সভা-সমাবেশ, জখম, চুরি, ভয়-ভীতি প্রদর্শন, গতিরোধ করে হুমকিসহ বিভিন্ন অভিযোগে পাঁচটি মামলা রয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন ওসি ফিরোজ।
তিনি জানান, নয়নের বিরুদ্ধে মামলা শুরু হয় ২০১৩ সালের ১৩ ডিসেম্বর থেকে। প্রথম মামলার বাদী ছিলেন উপজেলার ছোট বোয়ালী গ্রামের মৃত ওসমান সরদারের ছেলে মো. হুমায়ন। ওই মামলায় মারপিট করে আহত, চুরি ও হুমকির অভিযোগ ছিল।
এরপর ২০১৫ সালের ৩ অক্টোবর মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার পশ্চিম সেওতা গ্রামের আবুল কাশেম মিয়ার ছেলে মো. সোহেল (বুলেট) পেনাল কোড ১৮৬০ ধারায় একটি মামলা করেন।
২০১৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর শিবালয় উপজেলার নিহালপুর গ্রামের লঞ্চমালিক কদম আলী খন্দকারের ছেলে সোহেল খন্দকার বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেন।
এরপর ২০১৮ সালের ২১ আগস্ট একই উপজেলার নতুনপাড়া গ্রামের বাবুল হোসেনের স্ত্রী লিপি আক্তার একটি মামলা করেন নয়নের বিরুদ্ধে।
একই বছর ২৮ নভেম্বর দক্ষিণ তেওতা গ্রামের মৃত আব্দুল মোল্লার ছেলে মোশারফ হোসেন বাদী হয়ে ৪৪৮/৪২৭/৩৯২/৫০৬(২)/৩৪ পেনাল কোড ১৮৬০ ধারায় আরেকটি মামলা করেন।
প্রতিটি মামলায় একাধিক আসামি রয়েছে বলেও জানিয়েছেন পুলিশের এ কর্মকর্তা।
এ বিষয়ে নয়নের মন্তব্য জানতে তার মোবাইল ফোনে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও সেটি বন্ধ পাওয়া গেছে।
এ দিকে নবগঠিত কমিটি বাতিলের দাবিতে বুধবার দুপুরে উথলী মোড় এলাকায় ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে উপজেলা ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের একাংশ। এ সময় প্রায় আধাঘণ্টা যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। পরে পুলিশ এসে তাদের সড়ক থেকে সরিয়ে দিলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হয়।
এর আগে শিবালয় উপজেলা ডাকবাংলোয় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতারা।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করা হয়, জেলা ছাত্রলীগ মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে ছাত্রদল থেকে ‘অনুপ্রবেশকারী’ হিসেবে পরিচিত ওই দুজনকে দিয়ে কমিটি গঠন করেছে। ছাত্রলীগের নীতি বহির্ভূতভাবে দেওয়া এই কমিটি অবিলম্বে বাতিল করে কাউন্সিলের মাধ্যমে পুনরায় কমিটি গঠনের দাবি জানানো হয়।
দাবি বাস্তবায়ন না হলে আগামীতে আরও কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুমকি দেন তারা।
সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক মিরাজ হোসেন লালন, ছাত্রলীগের সদ্য সাবেক সভাপতি সেলিম রেজা, সহসভাপতি নাজমুল হাসান মীম, সাধারণ সম্পাদক দুলাল হোসেন প্রমুখ।
অপরদিকে নতুন কমিটি ঘোষণার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ছবি ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা গেছে, ছাত্রলীগের নতুন দায়িত্ব পাওয়া সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বিএনপির একটি ব্যানারসহ নেতাকর্মীদের সঙ্গে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছেন। এর মধ্যে একজন চেক শার্ট অপরজন পাঞ্জাবি পরা। ব্যানারে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার ছবি রয়েছে। তবে কোন কর্মসূচিতে তারা ব্যানার নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন সেটা স্পষ্ট বোঝা যায়নি।
এ সব বিষয়ে জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কাজী রাজু আহমেদ বুলবুলের ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করে ও বার্তা পাঠিয়ে তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।