ঢাকা মহানগরীতে যাত্রীবাহী বাসসহ অন্যান্য গণপরিবহনের সংকট দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি ভোগান্তি তো রয়েছেই। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরের প্রতিবাদে ইসলামী সংগঠনগুলোর বিক্ষোভ ও বিভিন্ন কর্মসূচি পালন এবং রোববার (২৮ মার্চ) হেফাজতে ইসলামের হরতাল কর্মসূচি ঘোষণার কারণে এমন পরিস্থিতি বলে মনে করছেন নগরবাসী।
অন্যদিকে ভিভিআইপি চলাচলের ফলে বিমানবন্দর সড়কসহ বিভিন্ন সড়কে যান চলাচল গতকাল শুক্রবার (২৬ মার্চ) থেকেই নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। যে কারণে সড়কে যানবাহন কম থাকায় লোকজনকে গন্তব্যে যেতে ব্যাপক ভোগান্তির পাশাপাশি অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হচ্ছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মৎস্য ভবন থেকে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন স্থানে ভিআইপি ও ভিভিআইপি মুভমেন্ট ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঠিক রাখতে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ করেছে পুলিশ। এসব এলাকার সড়কে গণপরিবহন নেই বললেই চলে। পাশাপাশি ব্যক্তিগত যানবাহন চলাচলেও পুলিশের কড়াকড়ি দেখা গেছে। এছাড়াও সড়কগুলোতে সাদা পোশাকে গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছে বলে জানা গেছে।
রাজধানীর পুরান পল্টনে বাসের তুলনায় মোটরসাইকেল ও রিকশার সংখ্যা বেশি বলে জানা গেছে। এদিকে আসাদগেট থেকে ফার্মগেট ও মহাখালীমুখী সড়ক বন্ধ থাকায় ভোগান্তির কবলে পড়া জাকির হোসেন বলেন, অনেক সময় ধরে অপেক্ষা করছি, কখন বাস চলবে জানি না! এদিকে শাহবাগ থেকে কারওয়ান বাজার হেঁটে আসা বৃদ্ধ পথচারী আসলাম রহমান বলেন, বহু কষ্টে শাহবাগ থেকে হেঁটে এসেছি। আমার পায়ে সমস্যা থাকার কারণে হেঁটে আসতে কষ্ট হচ্ছিলো।
সকাল থেকেই রাজধানীর আসাদগেট, খামারবাড়ি, ফার্মগেট, শাহবাগ, মিরপুর-১০, মিরপুর-১, শ্যামলী, প্রগতি সরণি, মালিবাগ, পল্টন, মতিঝিল, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন স্থানে বাস ও মিনিবাসের সংকট দেখা দেয়। ফলে যাত্রীরা বাস না পেয়ে বিকল্প পরিবহনে বেশি ভাড়ায় চলাচল করতে বাধ্য হন।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মিরপুর-মতিঝিল রুটসহ বিভিন্ন রুটের বাসগুলোর বড় অংশই চলাচলের জন্য সড়কে নামানো হয়নি। এছাড়া সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল, মহাখালী বাস টার্মিনাল ও গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকেও ঢাকার বাইরে সীমিত বাস ছেড়েছে।
পল্টনে বাসের জন্য দুপুর ২টা থেকে অপেক্ষা করে উত্তরা যেতে ৪শ টাকায় সিএনজিচালিত অটোরিকশায় ওঠেন শিক্ষার্থী সাদিক হাফিজ। তিনি বলেন, চরম দুর্ভোগে পড়েছি, সুযোগ পেয়ে চালকরা বেশি ভাড়া হাঁকিয়ে নিচ্ছে।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে ফার্মগেট হয়ে রামপুরা ও ডেমরা স্টাফ কোয়ার্টার রুটে চলাচলকারী স্বাধীন পরিবহনের বাস মানিক মিয়া এভিনিউ দিয়ে ঢুকতে চাইলেও পারেনি। সড়কটি নিরাপত্তার কারণে আটকিয়ে দিয়েছিল পুলিশ। যে কারণে বাসটি সায়েন্স ল্যাবরেটরি হয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যায়। এমন পরিস্থিতিতে ফার্মগেট ও কারওয়ান বাজার রুটের যাত্রীদের ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হয়। ওই বাসের যাত্রী শাহেদ মিয়া আরটিভি নিউজকে বলেন, হঠাৎ করে বাস থামিয়ে দিলো, কী করব? তাই হেঁটেই গন্তব্যে যেতে হচ্ছে।
ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক সামদানী খন্দকার বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে ইসলামি দলগুলোর কর্মসূচির কারণে বাস চালকরাও ঝামেলা এড়াতে কোনো কোনো রুটের গাড়ি বন্ধ রেখেছেন। তবে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে জরুরি সভা ডেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, আগামীকাল ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় গাড়ি চালানোর। যদিও হেফাজতে ইসলাম আগামীকাল সারাদেশে হরতাল পালনের প্রস্তুতি নিয়েছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ওসমান আলী বলেন, রাজধানী ঢাকায় বিভিন্ন সংগঠনের কর্মসূচির কারণে গণপরিবহন সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়া নাশকতার ভয়েও অনেকে বাস সড়কে নামাচ্ছেন না। আগামীকাল থেকে সড়কে পুরোদমে বাস চালানো হবে।