ইংল্যান্ডের কিংবদন্তি ফুটবলার ও বিশ্লেষক গ্যারি লিনেকারের টুইট, ‘সম্ভবত মেসির বেতন বাড়ানোর সময় হয়েছে।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কাল প্রায় সারা দিনই এ নিয়ে ঝড় উঠেছে। রাতে বার্সা মাঠে থাকতেও মেসির ফাঁস হওয়া চুক্তিপত্র নিয়ে কথা চলেছে। আর অ্যাথলেটিক বিলবাওয়ের জালে মেসির চোখজুড়ানো গোলের পর যেন ঢোলে রীতিমতো বাড়ি পড়েছে!
চার বছরে ৫৭০০ কোটি টাকার এই চুক্তিপত্রে ‘প্রতিটি পয়সার যোগ্য মেসি’—এমনটাই মতামত বেশির ভাগের। কেন যোগ্য এবং লিনেকারের দাবিও কেন অযৌক্তিক নয়, তার সর্বশেষ প্রমাণ হতে পারে কাল রাতের গোলটাই। বিলবাওকে ২-১ গোলে হারিয়েছে। ২০ মিনিটে ফ্রি কিক থেকে বার্সাকে প্রথম গোল এনে দেন মেসি।
৩০ গজ দূরে ফ্রি কিক পেয়েছিলেন মেসি। বিলবাও গোলরক্ষক উনাই সিমোন সামনে যথারীতি মানবদেয়াল তৈরি করেছিলেন। অতিরিক্ত সাবধানতা হিসেবে নিজের বাঁ পাশে ডিফেন্ডার ইয়েরেকেও দাঁড় করান বিলবাও গোলরক্ষক। অর্থাৎ এক অর্থে বিলবাওয়ে গোলপোস্টে ছিলেন দুজন। সিমোনের ডান দিকে জায়গা বেশি ফাঁকা থাকায় মেসি যে সেদিক দিয়ে শট নিতে পারেন, সেটাই ছিল সবার স্বাভাবিক ভাবনা।
কিন্তু বার্সা তারকার শটটি দেখলে মনে হবে জ্যামিতির মাপজোখ করে নেওয়া! যে দিক দিয়ে বল পাঠানোর কথা কেউ সম্ভবত ভাববে না, মেসি সেদিক দিয়েই নিখুঁত এক শটে বল পাঠান জালে। ইয়েরে তাঁর বাঁ প্রান্তে লাফিয়ে উঠে হেডে বলটা লক্ষ্যভ্রষ্ট করার চেষ্টা করেছিলেন। নাগাল পাননি। বলটা ঢুকেছে তাঁর মাথা, ক্রসবার ও পোস্টের মাঝে অল্প একটু ফাঁকা জায়গা দিয়ে। এমন গোল প্রতিদিন দেখা যায় না। মেসি তেমন এক গোল করে মাঠেই সবকিছুর জবাব দিলেন। লিনেকার তাই রসিকতার সুযোগটা ছাড়েননি।
খেলাধুলার দুনিয়ায় সবচেয়ে বড় অঙ্কের এই (মেসির) চুক্তি ফাঁস করে দেওয়ায় স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম ‘এল মুন্দো’র বিরুদ্ধে মামলা করবে বার্সা। ঠিক এদিন-ই বার্সার হয়ে দারুণ এক মাইলফলক গড়লেন মেসি। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে বার্সার হয়ে এটি ছিল তাঁর ৬৫০তম গোল। সরাসরি ফ্রি কিক থেকে করেছেন ৪৯ গোল, যার ৩৮টি লা লিগায়।
কাল মেসির বন্ধু ও সাবেক ক্লাব সতীর্থ লুইস সুয়ারেজ আতলেটিক মাদ্রিদের হয়ে ফ্রি কিক থেকে গোল করেন। বন্ধুর গোলের পর মেসির বোধ হয় আর দেরি সহ্য হয়নি। জবাব দেওয়া ও বন্ধুকে দেখিয়ে দেওয়ার তাড়নাটা বোধ হয় জেগে উঠেছিল। আর তাই যে খেলোয়াড় এর আগে ফ্রি কিকে ৬২ বার চেষ্টায় একটি গোল পান, সে-ই খেলোয়াড়ই শেষ চারবারের চেষ্টায় পেলেন দ্বিতীয় গোল। বার্সার হয়ে মেসির ৬০০তম গোলও ছিল ফ্রি কিক থেকে, লিভারপুলের জালে।
ইউরোপে শীর্ষ পাঁচ লিগে শেষ পাঁচ মৌসুম বিবেচনা করলে ফ্রি কিক থেকে গোলে কেউ মেসির ধারেকাছেও নেই। ফ্রি কিক থেকে এ সময় ২১ গোল করেছেন আর্জেন্টাইন এ তারকা। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা আলেক্সান্দার কোলারভের গোলসংখ্যা ৮। এমন খেলোয়াড়ের চুক্তিপত্রে ঈর্ষণীয় পারিশ্রমিক নিয়ে কথা ওঠার পেছনে ক্লাব আর্থিক দেনাও অন্যতম কারণ। প্রায় ১২০ কোটি ইউরো দেনা রয়েছে বার্সার। এর মধ্যে চার বছরে মেসির ৫৫ কোটি ৫০ লাখ ইউরো (বাংলাদেশি মুদ্রায় ৫৭০০ কোটি) পারিশ্রমিকের অঙ্ক দেখে অনেকের চোখ কপালে উঠেছে।
কিন্তু রোনাল্ড কোমানের চোখ কপালে উঠেছে অন্য কারণে। মেসির চুক্তিপত্র ফাঁস হতে পারে তা কোনোভাবেই বিশ্বাস হচ্ছে না বার্সার এই ডাচ কোচের। বিষয়টি তিনি মেনে নিতে পারছেন না। এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। এই চুক্তিপত্র যে বার্সা থেকেই ফাঁস হয়েছে সেটি আন্দাজ করা যায় কোমানের কথায়, ‘যে-ই মেসির চুক্তিপত্র ফাঁস করেছে, বার্সায় তার ভবিষ্যৎ থাকতে পারে না। মেসিকে নিয়ে সংবাদমাধ্যমে যা এসেছে তা ক্ষতিকর। এটা কীভাবে সংবাদমাধ্যমে গেল, তা আমাদের জানতে হবে।’
চুক্তিপত্র ফাঁস হওয়ার বিষয়টি কাল রাতের ম্যাচে মেসিকে আলাদাভাবে অনুপ্রাণিত করেনি বলেই মনে করছেন কোমান, ‘মেসিকে বেশ প্রেরণা নিয়ে খেলতে দেখলাম। কিন্তু অন্য কোনো ম্যাচের চেয়ে বেশি না। হ্যাঁ, খবরটা তার ওপর প্রভাব ফেলতেই পারে। ক্লাবের জন্য অনেক কিছু করেছে, এমন খেলোয়াড়দের তো সম্মান করতেই হবে। লিও একজন জয়ী। সে সব সময় নিজের যোগ্যতার প্রমাণ রাখতে চায়।’